তোকমা দানার উপকারিতা
ওজন কমাতে : দেহের ওজন কমাতে এ বীজের জুড়ি নেই। তোকমার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ...
এসিডিটি দূর করে : তোকমা এসিডিটি দূর করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে তোকমা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর খেতে হবে। ...
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ : রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর তোকমা।
তোকমা খাওয়ার ১৪ উপকারিতা
পানিতে ভিজিয়ে রেখে খান তোকমা।
ইফতারে তোকমার শরবত খেতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। স্মুদি কিংবা শরবতে ভেজানো তোকমা মিশিয়ে দিতে পারেন সহজেই। বীজটি ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। তোকমা অনেকটা চিয়া বীজের মতোই দেখতে, পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ছোট, কালো এবং থকথকে হয় এটি। খাওয়ার কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে তোকমা ভিজিয়ে রাখতে হবে। সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা পর্যন্ত এটি ভিজিয়ে রেখে খাওয়া যায়। জেনে নিন তোকমা খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
- তোকমায় প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে। ফাইবারের অনেক স্বাস্থ্য সুবিধার মধ্যে একটি হলো এটি কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম বা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও এটি সহায়ক।
- রোজা রেখে তোকমার শরবত খেলে আমাদের শরীরের তরলের মাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়। আমাদের হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে তোকমার শরবত।
- তোকমায় থাকা ফাইবার কার্ডিওভাসকুলার রোগ, কোলোরেক্টাল ক্যানসার এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
- ২০১৬ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, সম্ভাব্য অ্যান্টিডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে তোকমায়। শরীরের ওজন এবং রক্তে শর্করার মাত্রা উভয়ই কমাতে পারে উপকারী এই বীজ।
- ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো যৌগ রয়েছে তোকমায়। এটি এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহে অস্থির অণু প্রতিহত করতে পারে, যা ফ্রি র্যাডিক্যাল নামে পরিচিত এবং এগুলো কোষের ক্ষতি করে। ফ্রি র্যাডিক্যালের কারণে সৃষ্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের কারণ।
- তোকমায় ব্যাকটেরিয়ারোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে এই বীজে থাকা উপকারী উপাদানসমূহ।
- আর্থ্রাইটিসের প্রদাহ কমাতে পারে তোকমা।
- তোকমায় ভিটামিন (যেমন ভিটামিন কে), খনিজ পদার্থ (যেমন ক্যালসিয়াম) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে যা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
- তোকমায় মিউকিলেজ থাকে। এটি এক ধরনের জেলের মতো পদার্থ যা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ফুলে যায়। এই জেলের মতো টেক্সচার নিয়মিত খেলে হজম ভালো হয়।
- তোকমায় থাকা আঁশ অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। এটি তৃষ্ণা কমাতে এবং অতিরিক্ত খাওয়া আটকাতে সাহায্য করে।
- রক্তে শর্করার মাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে তোকমা। রক্ত প্রবাহে চিনির নিঃসরণকে ধীর করতে সাহায্য করার পাশাপাশি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এই বীজ।
- তোকমায় থাকা পলিফেনল কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
- ত্বকের অকাল বার্ধক্য আটকাতে পারে তোকমা। তোকমার শরবত নিয়মিত খেলে ত্বক হয় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
- তোকমার শরবত শরীর শীতল করে। এতে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমে। তোকমা দানার ভেষজ উপকারিতা
আমাদের দেশে তোকমা খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি বীজ দানা। যা পানিতে বা শরবতে ভিজিয়ে খেতে হয়। আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও চীনা মেডিসিনে যার বহুল ব্যবহার রয়েছে। একটি উদ্ভিজ্জ উপাদান হিসেবে থাকলেও এই বীজের ব্যবহার সারা দুনিয়াজুড়ে পানীয় হিসেবেই পরিচিত।
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, প্রোটিন, আয়রন এবং ক্যালরি।তোকমা বীজ পানিতে ভিজিয়ে খেতে হয় বলে এর একটি জেলী জাতীয় আবরণ হয়, যা পরিপাকে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে প্রচুর আঁশ থাকায় হজম, কোষ্টকাঠিন্য, ডায়রিয়া, আমাশয় ইত্যাদি সমস্যায় বেশ উপকারী ভূমিকা রাখে। আসুন এবার তোকমা দানার গুণাগুণ গুলি জেনে নেওয়া যাক :
পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে :
তোকমার বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখা হলে সেটা ফুলে বড় হয়ে তার শরীরের বাইরের আবরণে জেলী জাতীয় পদার্থ্ তৈরী করে । এটাই খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে থাকে । এছাড়াও তোকমাতে থাকা প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আশ খাদ্যকে দ্রুত পরিপাক হতে সাহায্য করে থাকে । কোষ্ঠ্যকাঠিন্য , ডায়রিয়া অথবা আমাশয়ের মতো পেটের সমস্যাতে তোকমার বীজ খুবই উপকারী । এছাড়াও তোকমা বীজের তেল গ্যাস্টিক আলসার সমস্যার জন্যে উপকারী একটি উপাদান ।
ওজন কমাতে সাহায্য করে :
তোকমা গ্রহণের ফলে ক্ষুধাভাব কমে যায় অনেকটা । যার ফলাফল স্বরূপ ওজন চলে আসে নিয়ন্ত্রণের মাঝে । যেহেতু তোকমাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ , যা পেট ভরা ভাব তৈরী করে থাকে । এর ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের প্রতি ইচ্ছা তৈরি হয় না ।
ঠাণ্ডা কশির সমস্যা দূর করতে :
প্রায় একশ বছর ধরে একদম সাধারণ ঠাণ্ডা কাশির সমস্যা থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্টের মতো গুরুত্বর সমস্যার ক্ষেত্রে ও তোকমা ব্যবহার করে আসছেন । তোকমা বীজে রয়েছে অ্যান্টি স্পাজমোডিক প্রভাব । যা উক্ত সমস্যার দূর করতে কার্য্করী । তোকমাতে থাকে অ্যান্টি ফাইরোটিক জ্বর কমাতে সাহায্য করে থাকে ।
প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে :
তোকমা বীজে থাকা প্রদাহ বিরোধী উপাদান সমূহ যেকোন ধরণের প্রদাহ কমাতে কাজ করে । শরীর কোন অংশ ফুলে যাওয়অ অথবা ব্যথাভাব দেখা দেওয়ার ক্ষেত্রে ও এটা কাজ করে থকে । আয়ুর্বেদ থেকে জানা যায় যে আর্থ্রাইটসের সমস্যার জন্য শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে গেলে সেটা কমিয়ে আনতে ও তোকমা দারুন কার্য্করী।
হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য এবং দুশ্চিন্তা কমাতে কাজ করে :
তোকমাতে থাকা অ্যান্টি হাইপারলিীপডেমিক কার্য্ক্রম কোলেস্টেরল এর সমস্যা কমিয়ে থাকে । তোকমা বীজের তেল লক্ষণীভাবে হাই লিপিড প্রোফাইল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে । যার ফলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে । এছাড়াও আয়ুর্বেদে দুশ্চিন্তা কমাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে :
তোকমা বীজে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্ল্যাভনয়েড এবং ফেনোলিক উপাদান সমূহ থাকার ফলে তোকমা গ্রহণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পায়। একই সাথে ফ্রি রেডিক্যাল ড্যামেজ থেকে রক্ষা করতেও বেশ উপকারী তোকমা ।
তোকমা খাওয়ার অপকারিতা
যেহেতু প্রায় প্রতিটা বিষয়ের খারাপ দিক এবং ভালো দিক রয়েছে তাই তোকমা খাওয়ার উপকারিতা থাকার পাশাপাশি তোকমা খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে।
- যদি কোন গর্ভবতী মহিলাকে বেশি তোকমা প্রদান করা হয় তাহলে তার অনেক সমস্যা হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে থাকা ইস্ট্রোজেন হরমোনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি তাকে খুব বেশি পরিমাণ তোকমা বীজ খাইয়ে দেওয়া হয় তখন এই ইস্ট্রোজেন হরমোনটির মাত্রা অনেকটা কমিয়ে আসতে পারে।
- যদি আমরা খুব ছোট শিশুদেরকে এটি খাওয়াই তাহলেও তাদের অনেক সমস্যা হতে পারে। যেহেতু ছোট শিশুর পেটে খুব বেশি পরিমাণে বিপাকীয় ক্ষমতা থাকে না তাই এটি থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও শিশুদের পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে এই তোকমা। এমনকি এই তোকমা দানর মারাত্মক একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে শিশুদের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে শিশুদের দম ও বন্ধ হয়ে আসতে পারে। এই কারণে শিশুদেরকে এটি কখনোই প্রদান করা যাবেনা সব সময় পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিরা এটি সেবন করবেন।
তোকমা খাওয়ার নিয়ম
উপরে আমরা পাঠকদেরকে তোকমা খাওয়ার উপকারিতা এবং তোকমা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অনেকে আছে যারা তোকমা খাওয়ার নিয়ম ভালো মতো বোঝে না।
এই কারণে এখন আমরা আপনাদেরকে তোকমা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেব।
- তোকমা সাধারণত বীজ বা দানা জাতীয় খাদ্য হয়ে থাকে। এই তোকমা দানাগুলোকে আপনারা পানির সাথে মিশিয়ে সুন্দরভাবে খেতে পারেন।
- এছাড়াও তোকমা দানা গুলোকে পানিতে ভিজিয়ে তারপর যখন এগুলো ফুলে উঠবে বা এগুলোর মধ্যে পানি ঢুকে যাবে তখনও খাওয়া যাবে।
- তোকমা দানা গুলো বাদামের সাথে ব্লেন্ডার করে ও খাওয়া যায় এতে শরীরের অনেক উপকার হয়।
- তোকমা দানা ভালোমতো পিষে নেওয়ার পরে পানির সাথে মিশিয়ে সেখানে দুধ এবং মধু দিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
- এগুলো ছাড়াও যদি আপনারা শুধুমাত্র পানির সাথে মিশিয়ে খেতে চান তাও খেতে পারবেন এবং সাথে চিনি দিতে চাইলে সেটাও দিতে পারবেন।
- উপরে বর্ণিত পদ্ধতি গুলো বাদেও আপনারা ইসবগুলের ভুষি এবং পানির সাথে মিশে মিক্সার করে তোকমা বীজ সেবন করতে পারবেন।
আরও তথ্যের জন্য:
- আপনার ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করুন।
- তোকমা দানার উপর গবেষণাপত্রগুলি পড়ুন।
- বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটগুলিতে তোকমা দানার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তথ্য খুঁজুন।
তোকমা প্রতিদিন রাতে পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খাওয়া ভালো। ১-২ চামচ তোকমা ২৫০গ্রাম পানি বা ১ গ্লাস পানির মধ্যে মিশিয়ে খাবেন। চিনি ছাড়া খাবেন। এটি চাইলে প্রতিদিন খেতে পারেন শরীরের জন্য উপকার কারণ তাপমাত্রা ঠিক রাখে,পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।