পণ্য: পাকিস্তানি তোকমা দানা
ওজন: ১৫০ গ্রাম
ইউনানি ও চীনা মেডিসিনে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, প্রোটিন, আয়রন ও ক্যালরি রয়েছে। যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তোকমা শরীরের নানা রকম সমস্যা প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর।
তোকমা খাওয়ার উপকারিতা
ইফতারে তোকমার শরবত খেতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। স্মুদি কিংবা শরবতে ভেজানো তোকমা মিশিয়ে দিতে পারেন সহজেই। বীজটি ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। তোকমা অনেকটা চিয়া বীজের মতোই দেখতে, পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ছোট, কালো এবং থকথকে হয় এটি। খাওয়ার কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে তোকমা ভিজিয়ে রাখতে হবে। সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা পর্যন্ত এটি ভিজিয়ে রেখে খাওয়া যায়। জেনে নিন তোকমা খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
- তোকমায় প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে। ফাইবারের অনেক স্বাস্থ্য সুবিধার মধ্যে একটি হলো এটি কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম বা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও এটি সহায়ক।
- রোজা রেখে তোকমার শরবত খেলে আমাদের শরীরের তরলের মাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়। আমাদের হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে তোকমার শরবত।
- তোকমায় থাকা ফাইবার কার্ডিওভাসকুলার রোগ, কোলোরেক্টাল ক্যানসার এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
- ২০১৬ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, সম্ভাব্য অ্যান্টিডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে তোকমায়। শরীরের ওজন এবং রক্তে শর্করার মাত্রা উভয়ই কমাতে পারে উপকারী এই বীজ।
- ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো যৌগ রয়েছে তোকমায়। এটি এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহে অস্থির অণু প্রতিহত করতে পারে, যা ফ্রি র্যাডিক্যাল নামে পরিচিত এবং এগুলো কোষের ক্ষতি করে। ফ্রি র্যাডিক্যালের কারণে সৃষ্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের কারণ।
- তোকমায় ব্যাকটেরিয়ারোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে এই বীজে থাকা উপকারী উপাদানসমূহ।
- আর্থ্রাইটিসের প্রদাহ কমাতে পারে তোকমা।
- তোকমায় ভিটামিন (যেমন ভিটামিন কে), খনিজ পদার্থ (যেমন ক্যালসিয়াম) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে যা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
- তোকমায় মিউকিলেজ থাকে। এটি এক ধরনের জেলের মতো পদার্থ যা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ফুলে যায়। এই জেলের মতো টেক্সচার নিয়মিত খেলে হজম ভালো হয়।
- তোকমায় থাকা আঁশ অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। এটি তৃষ্ণা কমাতে এবং অতিরিক্ত খাওয়া আটকাতে সাহায্য করে।
- রক্তে শর্করার মাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে তোকমা। রক্ত প্রবাহে চিনির নিঃসরণকে ধীর করতে সাহায্য করার পাশাপাশি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এই বীজ।
- তোকমায় থাকা পলিফেনল কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
- ত্বকের অকাল বার্ধক্য আটকাতে পারে তোকমা। তোকমার শরবত নিয়মিত খেলে ত্বক হয় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
- তোকমার শরবত শরীর শীতল করে। এতে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমে।
- ওজন কমাতে : দেহের ওজন কমাতে এ বীজের জুড়ি নেই। তোকমার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়া এর নানা উপাদান দেহের চর্বি কমাতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, যা বাড়তি ক্ষুধা দূর করে এবং পেট দীর্ঘক্ষণ পরিপূর্ণ থাকার অনুভূতি দেয়। এটি ওজন কমানোর মাধ্যমে হার্ট ব্লকের মত কঠিন রোগ থেক বেচে থাকতে সহায়তা করে এবং পরোক্ষভাবে কিডনিকেও রাখে সুস্থ।
- এসিডিটি দূর করে : তোকমা এসিডিটি দূর করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে তোকমা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর খেতে হবে। এছাড়াও তোকমার বীজ পানিতে পরিপূর্ণ থাকে, যা দেহের ক্ষতিকর পদার্থও দূর করতে সহায়ক। এসিডিটি পাকস্থলির জন্য খুবই ক্ষতিকর কিন্তু নিয়মিত তোকমা খেলে পেট সুস্থ থাকে।
- রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ : রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর তোকমা। মূলত দেহের বিপাকক্রিয়া ধীর করে দেয় তোকমা। ফলে কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুুকোজে রূপান্তরের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এ কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস যাঁদের রয়েছে, তারা এটি নিয়মিত খেতে পারেন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : তোকমা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সামান্য তোকমা অল্প পানিতে ভিজিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর তা দুধে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও এটি হজমের সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করে।
- সুস্থ ত্বক ও চুল : ত্বকের নানা সমস্যায় তোকমা ব্যবহার করা যায়। এ জন্য কিছু তোকমা বীজ গুঁড়ো করে তা নারিকেল তেলের সঙ্গে মাখিয়ে ত্বকে লাগাতে হয়। এটি নানা চর্মরোগ নিরাময়ে কাজ করে। এটি একজিমা ও সোরিয়াসিস নিরাময়ে কার্যকর। সুস্থ চুলের জন্য এটি নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
- ঠান্ডার সমস্যায় : তোকমা বীজে রয়েছে ঠান্ডা প্রতিরোধী উপাদান। এটি আপনার দেহকে ঠান্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়তে সহায়তা করবে। সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকতে চাইলে তাই নিয়মিত তোকমা খাওয়া যেতে পারে।
- ওমেগা-৩ : ওমেগা-৩ শরীরের জন্য ভীষণ দরকারি একটি উপাদান। উদ্ভিদ ভিত্তিক ওমেগা অ্যাসিডের সবচেয়ে ভালো একটি উৎস হচ্ছে তোকমা দানা। তাই তোকমা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
তোকমা খাওয়ার অপকারিতা
যেহেতু প্রায় প্রতিটা বিষয়ের খারাপ দিক এবং ভালো দিক রয়েছে তাই তোকমা খাওয়ার উপকারিতা থাকার পাশাপাশি তোকমা খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে।
- যদি কোন গর্ভবতী মহিলাকে বেশি তোকমা প্রদান করা হয় তাহলে তার অনেক সমস্যা হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে থাকা ইস্ট্রোজেন হরমোনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি তাকে খুব বেশি পরিমাণ তোকমা বীজ খাইয়ে দেওয়া হয় তখন এই ইস্ট্রোজেন হরমোনটির মাত্রা অনেকটা কমিয়ে আসতে পারে।
- যদি আমরা খুব ছোট শিশুদেরকে এটি খাওয়াই তাহলেও তাদের অনেক সমস্যা হতে পারে। যেহেতু ছোট শিশুর পেটে খুব বেশি পরিমাণে বিপাকীয় ক্ষমতা থাকে না তাই এটি থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও শিশুদের পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে এই তোকমা। এমনকি এই তোকমা দানর মারাত্মক একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে শিশুদের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে শিশুদের দম ও বন্ধ হয়ে আসতে পারে। এই কারণে শিশুদেরকে এটি কখনোই প্রদান করা যাবেনা সব সময় পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিরা এটি সেবন করবেন।
তোকমা খাওয়ার নিয়ম
উপরে আমরা পাঠকদেরকে তোকমা খাওয়ার উপকারিতা এবং তোকমা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অনেকে আছে যারা তোকমা খাওয়ার নিয়ম ভালো মতো বোঝে না।
এই কারণে এখন আমরা আপনাদেরকে তোকমা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেব।
- তোকমা সাধারণত বীজ বা দানা জাতীয় খাদ্য হয়ে থাকে। এই তোকমা দানাগুলোকে আপনারা পানির সাথে মিশিয়ে সুন্দরভাবে খেতে পারেন।
- এছাড়াও তোকমা দানা গুলোকে পানিতে ভিজিয়ে তারপর যখন এগুলো ফুলে উঠবে বা এগুলোর মধ্যে পানি ঢুকে যাবে তখনও খাওয়া যাবে।
- তোকমা দানা গুলো বাদামের সাথে ব্লেন্ডার করে ও খাওয়া যায় এতে শরীরের অনেক উপকার হয়।
- তোকমা দানা ভালোমতো পিষে নেওয়ার পরে পানির সাথে মিশিয়ে সেখানে দুধ এবং মধু দিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
- এগুলো ছাড়াও যদি আপনারা শুধুমাত্র পানির সাথে মিশিয়ে খেতে চান তাও খেতে পারবেন এবং সাথে চিনি দিতে চাইলে সেটাও দিতে পারবেন।
- উপরে বর্ণিত পদ্ধতি গুলো বাদেও আপনারা ইসবগুলের ভুষি এবং পানির সাথে মিশে মিক্সার করে তোকমা বীজ সেবন করতে পারবেন।