সামগ্রিকভাবে, ওয়েস্টার মাশরুম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং বহুমুখী খাবার যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। এগুলি ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ইমিউন-বুস্টিং যৌগগুলিতে সমৃদ্ধ এবং ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ওয়েস্টার মাশরুম
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ওয়েস্টার মাশরুম
ওয়েস্টার মাশরুম একটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় খাবার উপযোগী ছত্রাক। সুস্বাদু স্বাদ এবং রন্ধনসম্পর্কীয় বহুমুখিতা ছাড়াও, ওয়েস্টার মাশরুমগুলির বিস্তৃত স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার রেফারেন্স সহ ওয়েস্টার মাশরুমের কিছু প্রধান স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানানো হলো। সর্বপ্রথম, ওয়েস্টার মাশরুম পুষ্টির একটি চমৎকার উৎস। এগুলিতে ক্যালোরি কম, প্রোটিন বেশি এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে ভরপুর। ওয়েস্টার মাশরুম থিয়ামিন, রিবোফ্লাভিন এবং নিয়াসিন সহ বি ভিটামিনে সমৃদ্ধ, যা শক্তি বিপাক এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক, চোখ এবং স্নায়ুতন্ত্র বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়। এগুলিতে কপার, আয়রন এবং জিঙ্কের মতো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খনিজ রয়েছে, যা লাল রক্তকণিকা গঠন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি সাধন এবং ক্ষত নিরাময় সহ বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয়।
ওয়েস্টার মাশরুমগুলিও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা শরীরকে ফ্রি র্যার্ডিক্যাল নামক ক্ষতিকারক অণুগুলির দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জার্নাল অফ এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ওয়েস্টার মাশরুমে এরগোথিওনিন এবং গ্লুটাথিয়ন সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উচ্চ ঘনত্ব রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে পারে।অয়েস্টার মাশরুমের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে বলে জানা যায়। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মেডিসিনাল মাশরুম-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে অয়েস্টার মাশরুমের ইমিউনোমোডুলেটরি প্রভাব রয়েছে, যার অর্থ তারা ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে। এটি বিটা-গ্লুকানগুলির উপস্থিতির কারণে, ওয়েস্টার মাশরুমে পাওয়া এক ধরণের পলিস্যাকারাইড যা ম্যাক্রোফেজ এবং প্রাকৃতিক হত্যাকারী কোষের মতো রোগ প্রতিরোধক কোষগুলির কার্যকলাপকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
তাদের পুষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সুবিধা ছাড়াও, ওয়েস্টার মাশরুমের প্রদাহ-বিরোধী প্রভাবও থাকতে পারে। প্রদাহ হল আঘাত বা সংক্রমণের জন্য ইমিউন সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, তবে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিকাশে অবদান রাখতে পারে।গবেষণায় দেখা গেছে যে ওয়েস্টার মাশরুমে এমন যৌগ রয়েছে যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, এরগোথিওনিন এবং লোভাস্ট্যাটিন সহ।
জার্নাল অফ মেডিসিনাল ফুডে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ওয়েস্টার মাশরুম প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগের লক্ষণগুলি উপশম করতে সহায়তা করতে পারে।
ওয়েস্টার মাশরুমের ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারিতা পাওয়া গেছে। ২০১৪ সালে জার্নাল অফ ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিক ডিসঅর্ডার-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ওয়েস্টার মাশরুমের নির্যাসের পরিপূরক টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে উন্নতি করেছে। সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে ঝিনুক মাশরুমের নির্যাস মোট কোলেস্টেরল এবং এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা হৃদরোগের ঝুঁকির কারণ যা সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে বেশী থালে। উপর্যুপরি ওয়েস্টার মাশরুমগুলির একটি কম গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে, যার অর্থ তাদের রক্তে শর্করার মাত্রার উপর ন্যূনতম প্রভাব রয়েছে, যা তাদের ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি ভাল খাদ্য হিসেবে প্রমাণ করে।
সামগ্রিকভাবে, ওয়েস্টার মাশরুম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং বহুমুখী খাবার যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। এগুলি ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ইমিউন-বুস্টিং যৌগগুলিতে সমৃদ্ধ এবং ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
সুস্বাদু স্বাদ এবং অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা সহ, ওয়েস্টার মাশরুমগুলি যে কোনও বয়সের মানুষের খাদ্যতালিকায় একটি দুর্দান্ত সংযোজন।
মাশরুমের উপকারিতা, কীভাবে খাবেন
মাশরুমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশির কাছ থেকে।
'ব্যাঙের ছাতা' হিসেবে পরিচিত মাশরুম খেতে চান না অনেকেই, অথচ এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। মাশরুমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশির কাছ থেকে।
সর্বশেষ খবর দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে।
মাশরুম কী
পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, মাশরুম ছত্রাক পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। প্রায় ১৪ হাজার প্রজাতির মাশরুম এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে। তবে সব ধরনের মাশরুম খাওয়া যায় না। অনেক বিষাক্ত মাশরুম রয়েছে যেগুলো বনে জঙ্গলে পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে অর্গানিক বা নিজেদের চাষ করা মাশরুম খাওয়াই ভালো। যেমন- বাটান মাশরুম, ওয়েস্টার মাশরুম, পোর্টেবেলো মাশরুম এগুলো বেশ জনপ্রিয়।
আমাদের দেশে মাশরুম ব্যাঙের ছাতা হিসেবেই অনেকের কাছে পরিচিত। এটিকে খাবার হিসেবে অনেকেই এখনও গ্রহণ করতে পারেননি। শহরের মানুষের মধ্যে মাশরুম খাওয়ার প্রবণতা বাড়লেও, সেটি এখনও খুব বেশি নয়।
ইফতারের কতক্ষণ পর রাতের খাবার খাওয়া ভালো
তবে যেখানে-সেখানে গজানো নয়, অর্গানিক বা নিজে চাষ করা মাশরুম খাওয়া নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত।
অনেকেই জানেন না কীভাবে মাশরুম খেতে হবে, কীভাবে চাষ করা যায়। আবার মাশরুম বিষাক্ত কি না সেটি নিয়েও সংশয়ে থাকেন অনেকে। যে কারণে মাশরুমের চাহিদা কম, সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে না এটি দেশে। এ ছাড়া, মাশরুমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। যে কারণে গরু, খাসি কিংবা মুরগির মাংস খাওয়ার দিকে ঝোঁক বেশি। অথচ সঠিক উপায় যদি মাশরুম দিয়ে স্যুপ, সবজি কিংবা বিভিন্ন খাবার তৈরি করে খাওয়া যায় তাহলে সব বয়সী মানুষের প্রোটিনের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব হবে।
মাশরুমের পুষ্টিগুণ
পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, মাশরুমের কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। এতে প্রচুর প্রোটিন পাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে আরও আছে অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিবায়োটিক, জিঙ্ক, মিনারেল, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি।
মাশরুমের উপকারিতা
১. মাশরুমে লো ক্যালোরি থাকায় যারা ওজন কমাতে চান তারা খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।
২. পেশি বাড়াতে যারা বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খোঁজেন, তাদের জন্য মাশরুম প্রোটিনের সেরা উৎস হতে পারে।
৩. মাশরুমে পেনিসিলিন থাকে, যা এক রকম অ্যান্টিবায়োটিক যেটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
কুসুম গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেলে কি ওজন কমে
৪. মাশরুম ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
৫. ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক মাশরুম।
৬. হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৭. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
৮. মাশরুমে থাকা পুষ্টি উপাদান ক্যানসার ও টিউমার প্রতিরোধে বেশ সাহায্য করে।
৯. শিশুদের হাড় ও দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে।
১০. অ্যানিমিয়া দূর করতে ভূমিকা রাখে মাশরুম। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন মাশরুম খাদ্যতালিকায় থাকলে বেশ উপকারে আসে এক্ষেত্রে।
১১. মাশরুম শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আরও
ভাতের সঙ্গে প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খাওয়া কি ভালো
কীভাবে খাবেন
সালাদ হিসেবে মাশরুম বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া মাশরুম স্যুপ, ক্রিম মাশরুপ স্যুপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। সবজির সঙ্গে মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন রেসিপি করে খাওয়া যেতে পারে। নুডুলসের সঙ্গে মাশরুম মিশিয়ে খেতে পারেন, ফ্রাই করেও খেতে পারেন। মাশরুমের পাউডার তৈরি করে নেওয়া যায়, স্যুপে আস্ত মাশরুম ব্যবহার না করে পাউডার আকারে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
সতর্কতা ও কারা খাবেন না
কখনোই কাঁচা বা অল্প সেদ্ধ করে মাশরুম খাওয়া উচিত নয়। এতে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন ও হজমের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। মাশরুম বিষাক্ত কি না সেটি নিশ্চিত হয়ে খেতে হবে।
যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, বিশেষ করে মাশরুম খাওয়ার কারণে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা হয়, তাদের মাশরুম না খাওয়াই ভালো। মাশরুম যেহেতু ছত্রাকজনিত প্রোটিন তাই কিডনি রোগীরা এটি খাবেন না। যাদের হজমে সমস্যা হয়, পেটের নানা রকম সমস্যা থাকে, বার বার ডায়রিয়া হয় তাদের মাশরুম খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।